সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৮ অপরাহ্ন
মো. আবদুল গনী শিব্বীর:
কুমন্ত্রণা। ভয়াবহ এক ব্যাধির নাম। অভিশপ্ত শয়তান কর্র্তৃক মানব মনে ঢেলে দেওয়া কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মানুষের মনে নানাবিধ কুচিন্তার উদ্ভব ঘটে। কুচিন্তা একটি মন্দ স্বভাব ও মন্দ ব্যাধি, যা মানব মনকে কলুষিত করে বিষিয়ে তোলে। কুচিন্তা মানুষকে বাচাল, উগ্র, বদমেজাজি ও অমানবিক করে তোলে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কুচিন্তা কেবল ব্যক্তিকে নয় বরং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নানাবিধ অসুবিধার মধ্যে ফেলে দেয়। কুচিন্তা ও কুমানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি নিজ পরিবারের, আর বুদ্ধিজীবীরা কুবুদ্ধি ও কুপরামর্শ দিয়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি করে ছাড়ে। কুচিন্তা ব্যক্তির ওপর প্রভাব ফেলে, যে কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কুঅভ্যাসে নিজেকে জড়িয়ে নেয়।
কুমানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি নানাবিধ পাপ কাজে শামিল হয়ে নিজের আমলনামাকে পাপ রাশিতে ভরে ফেলে। পাপের অনুতাপে নিজের ব্যক্তিসত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ইহকাল ও পরকালে নিজেকে পাপীষ্ঠের তকমায় কলুষিত করে। পাপের কারণে নিজের মানসম্মান নষ্ট করে জনগণের কাছে নিজেকে উপহাসের পাত্র বানায়। ঘৃণিত ব্যক্তিও তার সঙ্গে তাচ্ছিল্যের মতো অমানবিক আচরণ করে। কুচিন্তাজনিত কারণে পাপের ময়লায় তার জীবন কয়লার মতো জ্বলতে থাকে। যার ফলে সুন্দর জীবনটা কালো ছাইয়ের মতো হয়ে যায়। কুচিন্তা ব্যক্তিকে কয়লার মতো জ্বালিয়ে মরার আগেই মেরে ফেলে।
শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা ঢেলে দেয়। কোরআন মাজিদে এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।’-সুরা নাস : ৫-৬
ইবলিশ তার মারাত্মক অস্ত্র ‘কুমন্ত্রণা’ দিয়ে মানব হৃদয়ের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইমান হরণ করে এবং মানুষকে কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা দেয়, কুচিন্তায় চিন্তিত ও ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। মানুষ যেন দিগি¦দিক জ্ঞান হারিয়ে বিপথে চলে, কুকর্ম করে এ জন্য সে তার সব শক্তি প্রয়োগ করে বিধ্বংসী মিশন পরিচালনা করে।
মহান আল্লাহর স্মরণ ব্যক্তিকে কুচিন্তা থেকে দূরে রাখে। মানুষ যখনই আল্লাহকে ভুলে যায়, তার ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে থাকে তখন মানব মনে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়। শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে মানুষ কুচিন্তা করে, কুকর্মে নিয়োজিত হয়। কুকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির আমলনামায় পাপ লেখা হয়। যে ব্যক্তি কুচিন্তা করে তবে কুকর্মে লিপ্ত হয় না তার আমলনামায় পাপ লেখা হয় না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের অন্তরে যেসব কুচিন্তা জাগ্রত হয় আল্লাহতায়ালা তা থেকে আমার উম্মতকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যতক্ষণ তারা তা মুখে উচ্চারণ না করবে বা কর্মে বাস্তবায়ন না করবে।’-সহিহ বোখারি
কুচিন্তার অভ্যাস মূলত শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে হয়। অনেক ব্যক্তি নিজেকে কুচিন্তা থেকে বাঁচাতে পারে তার ইমানের দৃঢ়তার কারণে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবিদের একদল লোক হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আগমন করে জিজ্ঞাসা করল, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাকো? তারা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটি তোমাদের ইমানের স্পষ্ট প্রমাণ।’-সহিহ মুসলিম
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নবী কারিম (সা.)-এর কাছে একজন লোক আগমন করে বলল, আমার মনে কখনো এমন কথার উদয় হয়, যা উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে বেশি ভালো মনে হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি এ বিষয়টিকে নিছক একটি মনের কুমন্ত্রণা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।’-সুনানে আবু দাউদ
কুচিন্তার কুফল : কুচিন্তার অনেক কুফল রয়েছে। কুচিন্তায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে যেসব কুফল দেখা যায় তা উল্লেখ করা হলো। ১. মনকে বিষিয়ে তোলে ২. মনের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ জাগ্রত করে ৩. স্নেহ ও ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দেয় ৪. মায়া মমতাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ৫. মনে অপরাধবোধ জাগ্রত করে ৬. সন্দেহ প্রবণতা ও ঝগড়া প্রবৃত্তি বৃদ্ধি করে ৭. স্বার্থপরতা, হীনতা ও নীচুতা ব্যক্তিকে পেয়ে বসে ৮. অপরকে শত্রুজ্ঞানকরত স্বজনকেও পর ভাবে ৯. দৈহিক ও মানসিক শান্তি তিরোহিত হয়ে যায় ১০. নিজেকে সমাজচ্যুত মনে করত সমাজবিদ্বেষী বনে যায় ১১. ধর্মকর্ম পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করে ১২. ইবাদতে অমনোযোগিতার কারণে ইবাদতকে নিষ্ফল ও অপ্রয়োজনীয় মনে করে ১৩. সামাজিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় ১৪. পাপ কাজে উৎসাহ ও আনন্দ লাভ করে ১৫. বিবেকের শাণিত অবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে ১৬. আত্মবিশ্বাসীকে সন্দেহের কাতারে শামিল করে ১৭. অপব্যয়কে অতি প্রয়োজনীয় মনে করে ১৮. মানসিক বিষণœতা সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে ১৯. ভোগবাদে উৎসাহ জোগায় ২০. পরকালীন জবাবদিহিকে ভুলিয়ে দেয়।
ভয়েস/আআ